পাকিস্তানি লেখিকার উর্দু এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় (খুব সম্ভবত) ২০০৩ সালে। আমি জানিনা কেন এই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম কারন আমি তো উপন্যাস , গল্প বা প্রেম কাহিনী এই ধরনের বই পড়িনা।
শুরুতে আমার এই ধারণা ছিল না যে এই বইয়ের সাথে থাকা আমার প্রত্যেকটা সময়কাল শেষ কয়েক দিনের সবথেকে সুন্দরতম সময় হবে। যতটা সময় আমি এই বইয়ের সাথে ছিলাম ততটা সময় আমি খুব ভালো ছিলাম।
এমন একটা বই এমন একটা উপন্যাস যেটাকে আপনি যেকোনো একটা জনরায় রাখতে পারবেন না। রোমান্টিক,ইসলামিক,আত্মউন্নয়নমূলক, সাইকোলজিকাল থ্রিলার আরো কত কি । প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা আপনাকে একদম আবেগে আপ্লুত করে রাখবে। লেখায় এত ডিটেইলিং আপনি প্রত্যেকটা কাহিনীর সিন অনুভব করতে পারবেন, ইমাজিন করতে পারবেন। এই বইকে আমার রিভিউর শব্দে আনা কখনোই সম্ভব না।
প্রধান চরিত্র : সালার সিকান্দার , ইমামা হাশিম
কাদিয়ানী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ইমামা হাশিম ইসলাম গ্রহণ করার পরে সালার সিকান্দারের সাহায্যে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পাড়ি দেয়।
এদিকে ইসলাম থেকে যোজন যোজন দূরে সালার সিকান্দার যুবক বয়সে এমন কোনো পাপ নেই যেটা সে করেনি ।
ইমামা হাশিম মেডিকেল পড়ুয়া ঠান্ডা স্বভাবের একদিন ডাক্তার হবে এই স্বপ্নে বাঁচা মেয়ে অপরদিকে সালার সিকান্দার ১৫০+ আইকিউ ও ফোটোজেনিক মেমোরির নিয়ামতে থাকা গুনাহের সাগরে ডুবে থাকা ছেলে ।
এভাবেই চলতে চলতে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার পরে সালার সিকান্দার হেদায়েতের আলোতে আলোকিত হয়। যে ছেলে আ*ত্ম*হ*ত্যা করতে চাই তো , যে মারাত্মক প*র্নো*গ্রা*ফি*তে আসক্ত ছিল, ড্রাগস , ড্রিংকস, পার্টি , নিষিদ্ধ এলাকায় যাওয়া ছেলে যেভাবে একটা সময় হেদায়েতের আলো পায় , কিভাবে কুরআনে হাফেজ হয় , কিভাবে তার জীবনের একমাত্র ভালোবাসাই যে ইমামা হাশিম তা অনুভব করতে পারে , কিভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেয় , কিভাবে আলোর পথে চলতে থাকে । কিভাবে ইমাম হাশিম তার সবকিছু হারিয়ে ও সবর করার পুরস্কার হিসেবে সর্বশেষ আল্লাহ তা’আলা তাকে উত্তম প্রতিদান হিসেবে সালার সিকান্দারকে দিয়ে দেন। সেই সালার সিকান্দার যাকে ইমামা হাশিম মোটেও পছন্দ করে না , যাকে ইমামা হাশিম পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ মনে করে এবং সেই সালার সিকান্দার যে কাবা শরীফের সামনে রবের কাছে শুধুই ইমাম হাশিম কে দুআ তে চেয়ে নয় বছর অপেক্ষা করে।
অসাধারণ অসাধারণ ঘটনায় পরিপূর্ণ এই উপন্যাস। প্রত্যেকটা ঘটনা আপনাকে কোনো কিছু বলার অযোগ্য করে দিবে । বইটি পড়তে পড়তে আপনি কাল্পনিক জগতে ডুবে যাবেন , আবেগে আপ্লুত হবেন , অবাক হবেন , কিছু ঘটনায় তো প্রচুর কান্নাও করবেন বিশেষ করে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠাগুলো তো আপনাকে কান্না করতে বাধ্য করবে , যেই সেই কান্না না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে আপনাকে বাধ্য করবে। এই বই আপনাকে লক্ষ্য দিবে , এই বই আপনাকে সবর করা শিখাবে , জীবনকে উপভোগ করা শিখাবে জীবনকে উপলব্ধি করা শিখাবে । যতদিন বইটা পড়বেন আর যতদিন বইয়ের রেশ আপনার মধ্যে থাকবে আপনার অনুভূতি রোমাঞ্চিত হওয়ার শীর্ষ থাকবে।
আমি ফিজিক্যালি বইটা শেষ করেছি কিন্তু মেন্টালি, ইমোশনালি শেষ করিনি কখনো পারবো ও না।
বইটির দ্বিতীয় অংশ হলো আব-এ- হায়াত।
এই বই পড়ার অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি আমার কাছে হাজারটা লাল গোলাপের সৌন্দর্যের মতো।
সাদিয়া বিনতে আনিস।
Reviews
There are no reviews yet.